স্ট্রোক চিকিৎসায় অকুপেশনাল থেরাপী : স্ট্রোক কি?

কোন কারনে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালিত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যাওয়াকে স্ট্রোক বলে ।
স্ট্রোকের প্রাথমিক লণসমূহ:
হঠাৎ করে শরীরের একাংশ যেমন মুখ, হাত এবং পা অবশ হয়ে যাওয়া।
হঠাৎ এক চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বা ঝাপসা দেখা।
হঠাৎ কথা বলতে সমস্যা হওয়া বা অন্যের কথা বুঝতে কষ্ট হওয়া।
কোন কারণ ব্যতিত প্রচন্ড মাথা ব্যথা হওয়া।
হঠাৎ মাথা ঘুরানো, অস্থির লাগা বা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়া।
স্ট্রোকের জন্য দায়ী কারণ সমূহ:
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে;
ডায়াবেটিস্;
কোস্টেরলের মাত্রা অধিক হওয়া;
ধুমপান ;
অতিরিক্ত ওজন;
পরিবারে কারও স্ট্রোক থাকলে;
হার্টের কোন রোগ বা করোনারী আর্টারী ডীজিস থাকলে;
মদ বা গাজা খাওয়া;
স্ট্রোকের কারণ?
প্রধানত ২ কারনে স্ট্রোক হয়
১. মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে
আমাদের শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনকি আমাদের ব্রেনেরও অক্সিজেন ও খাদ্য প্রয়োজন যা রক্তনালীর মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। যদি কোন কারনে এই প্রবাহ কয়েক মিনিটের জন্য বন্ধ থাকে তাহলে ঐ সকল অঙ্গে কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। তেমনি স্ট্রোক ঘটে যখন রক্তনালীর ভেতরের কোন জায়গায় রক্ত জমাট বেধে যায়। এতে করে রক্তনালীর স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের সমস্যা দেখা যায়।
২. মস্তিষ্কের রক্তরণ ঘটলে
আবার যদি কোন কারনে রক্তনালী ছিড়ে যায় তাহলে ব্রেনে রক্তরণ হয় যার ফলে স্ট্রোক হয়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাদের েেত্র এ ধরণের স্ট্রোক বেশি দেখা যায়।
স্ট্রোক পরবর্তী লণসমূহ
মাংশপেশীর স্বাভাবিক কার্যমতার পরিবর্তন ঘটে ;
হাত ও পায়ে ব্যথা থাকতে পারে;
হাত ও পায়ের নাড়াচাড়া সম্পূর্ণ বা আংশিক কমে যেতে পারে;
মাংশপেশী শুকিয়ে অথবা শক্ত হয়ে যেতে পারে;
হাটাচলা, উঠাবসা, বিছানায় নাড়াচাড়া কমে যেতে পারে;
নাড়াচাড়া কমে যাওয়ার ফলে চাপজণিত ঘা দেখা যেতে পারে;
সোল্ডার বা কাঁধের জয়েন্ট সরে যেতে পারে;
Personality পরিবর্তন
পায়খানা প্রসাবের নিয়ন্ত্রন মতা কমে যাওয়া;
দ্বিধাদ্বন্দে ভোগা;
অকুপেশনাল থেরাপী
স্ট্রোক চিকিৎসায় অকুপেশনাল থেরাপী একটি বিজ্ঞান ও শিল্পসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি। অকুপেশনাল থেরাপী চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে একজন স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তি তার শারীরিক, চিন্তাগত এবং পরিবেশ সম্পর্কিত সমস্যাবলী কাটিয়ে তার অবস্থা অনুযায়ী পূর্বের কর্মমতা ফিরে পেতে সম হবেন।
অকুপেশনাল থেরাপী চিকিৎসা পদ্ধতি:
অকুপেশনাল থেরাপীস্টগণ সাধারণত চারটি ধাপে একজন স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
প্রথম ধাপ : Adjunctive method (এডজাংটিভ মেথড)
এই ধাপটিকে প্রস্তুতি গ্রহনের ধাপ বলা হয়। ဴেত্রে একজন স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যাক্তিকে বিভিন্ন Therapeutic technique এর মাধ্যমে তার পূর্বের কর্মমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপ : Enabling activity (এনাব্লিং এ্যাকটিভিটি)
এই ধাপে একজন স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যাক্তিকে দৈনন্দিন কাজের অনুরূপ থেরাপীতে অংশগ্রহণ করানো হয়। যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার দৈনন্দিন কাজে স্বনির্ভর হতে সম হবেন।
তৃতীয় ধাপ : Purposeful activity (পারপাস্ফুল এ্যাকটিভিটি )
এটি অকুপেশনাল থেরাপীর প্রধান ও গুরূত্বপূর্ণ ধাপ। এই ধাপে দৈনন্দিন কাজগুলো সরাসরি অনুশীলন করার মাধ্যমে রোগীর সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মদဴতাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়।
চতুর্থ ধাপ : Occupational Role and Performance (অকুপেশনাল রোল এন্ড পারফরমেন্স)
অকুপেশনাল থেরাপীর সকল ধাপ সম্পন্ন করার পর এই ধাপে একজন ব্যাক্তি পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মজীবনে তার নিজস্ব ভূমিকা পালনে সম হয়।
স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়সমূহ:
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া;
ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা;
সব সময় কাজের মধ্যে থাকা;
ধুমপান না করা;
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখা;
খাবারে কোলেস্টেরল এবং ফ্যাটের পরিমাণ কম রাখা;
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা;
ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খাওয়া;
নিয়মিত ব্যায়াম করা;
অতিরিক্ত পরিমাণে ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকা;
লেখক:
রাবেয়া ফেরদৌস
অকুপেশনাল থেরাপিস্ট
ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস ও হাসপাতাল
শের-ই-বাংলানগর, ঢাকা ।
ইমেইল: rabeya1988@gmail.com
Comments
আরও পড়ুন





