সাবেক প্রবাসী স্বামী ও তার দলবল বিবস্ত্র করে কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের দুই ঘন্টা পর উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় এক কলেজ ছাত্রীকে প্রকাশ্য দিবালোকে মারধর, বসত ঘর ভাংচুর শেষে বিবস্ত্র করে তুলে নেয় মালয়েশিয়া প্রবাসী স্বামী ও তার ভাড়া করা দলবল। এসময় মেয়েকে বাচাতে এলে ওই ছাত্রীর মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মারধর করে। এ ঘটনায় ৯৯৯-এ ফোন দিলে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ অপহরণের দুই ঘন্টা পর ওই কলেজ ছাত্রীকে সাবেক স্বামীর বসত ঘর হতে উদ্ধার করে। এঘটনায় আহত মা খোর্শেদা বেগম (৫০) কে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এদিকে এ ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হলেও থানা পুলিশ রহস্যজনক কারনে মামলা নেয়নি।
পারিবারিক সূত্র ও ওই কলেজ ছাত্রী জানান, উপজেলার জরিপেরচর গ্রামের দরিদ্র হাবিবুর রহমান খানের মেয়ে ও শহরের মহিউদ্দিন আহমেদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের বিএ ২য় বর্ষের ছাত্রী হামিদা আক্তারের সাথে তার অসম্মতিতে পাশর্^বর্তী বড়মাছুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়মাছুয়া গ্রামের মৃত আহাম্মদ হাওলাদারের পুত্র মালয়েশিয়া প্রবাসী রুহুল আমিনের সাথে বিগত ২ ডিসেম্বর ২০১৬ ইং বিয়ে হয়। এ বিয়ের পর থেকে বনিবনা হচ্ছিল না তাদের। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে স্বামী রুহুল আমীন ওই ছাত্রীর ওপর অশ্লীল ব্যবহারসহ নির্যাতন চালাত। এক পর্যায়ে হামিদা অতিষ্ট হয়ে প্রবাসী স্বামীকে ২০১৯ সালে তালাক দেয়। তালাক দেয়ার পর ওই ছাত্রীর স্বামী রুহুল আমীন ক্ষুব্ধ হয়ে মালয়েশিয়া থাকাকালে সাবেক স্ত্রীর বাবার মোবাইল ফোনে শ্লীলতাহানীসহ খুন জখমের হুমকি দেয়। শুধু তাই নয় রুহুল দেশে এসে সাবেক স্ত্রী ও ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে ২টি মামলা দায়ের করে। যা আদালতে বিচারাধীন। এদিকে রুহুলের অব্যহত হুমকির মুখে হামিদা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ওই সময় মঠবাড়িয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে (যার নং ২৮০, তারিখ- ০৬/০২/২০২০)। এদিকে গতকাল রোববার ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টার সময় প্রাক্তন স্বামী রুহুল আমিন মালয়েশিয়া থেকে সরাসরি সাবেক স্ত্রীর বাড়ীতে এসে এবং তার ভাড়া করা বড়মাছুৃয়া হতে আনা ১৮/২০ জনের দল নিয়ে এসে জরিপেরচরের বসত ঘরের পিছনের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে। হামিদাসহ পরিবারের সদস্যদের জিমি করে বিবস্ত্র করে টেনে হিচরে মাইক্রো গাড়ীতে জোর পূর্বক তুলে নেয়। ওই কলেজ ছাত্রী জানান, আমার প্রাক্তন স্বামী তার বাড়ীতে নিয়ে আমাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে আমার অশ্লীল দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে। এসময় স্থানীয় বসির নামক এক প্রতিবেশী ৯৯৯-এ ফোন দিলে অপহরণের দুই ঘন্টা পর দক্ষিণ বড়মাছুয়ার ছেলের বসত ঘর হতে থানা পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বেতমোর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মোস্তফা মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি ওই কলেজ ছাত্রীকে রুহুল ও তার দলবল বিবস্ত্র করে অজ্ঞান অবস্থায় মাইক্রোযোগে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তিনি গাড়ী থামাতে বললে তারা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যায়।
মা খোর্শেদা বেগম জানান, গতকাল রোববার সকালে এক নিকট আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এসময় রুহুল ও তার দলবল এসে আমাদেরকে মারধর করে মেয়েকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যায় এবং আমাদের ব্যবহৃত মোবাইল ও স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এর প্রতিবাদ করলে আমাকে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মারধর করে।
ওই কলেজ ছাত্রী জানান, আমাকে পুলিশ উদ্ধার করার পর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও গত দুইদিন অতিবাহিত হলেও এ ঘটনায় থানা পুলিশ রহস্যজনক কারনে কোন মামলা নেয়নি। বিষয়টি আমি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ওই ছাত্রী আরও অভিযোগ করেন, একটি প্রভাবশালী মহল আমাকে এ ঘটনার পর থেকে হুমকি দিচ্ছে এবং ফয়সালার নামে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। রুহুলসহ ও ওই প্রভাবশালীদের হুমকিকে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ ব্যাপারে প্রবাসী রুহুল আমিন বসত ঘর ভাংচুর, তছনছ ও (হামিদাকে) বিবস্ত্র করে তুলে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওই কলেজ ছাত্রী আমার স্ত্রী দাবী করে মালয়েশিয়া থেকে আসার খবর পেলে হামিদা অন্যত্র পালিয়ে যাবে এজন্য তাকে গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে যাই।
থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, ঘটনার খবর পেয়ে ওই কলেজ ছাত্রীকে ঘটনার পর পরই দক্ষিণ বড়মাছুয়ায় রুহুলের বসত ঘর হতে উদ্ধার করে পুলিশ। এ বিষয়ে ভূক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে আরো বলেন- এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও বলেন, সাবেক স্বামী প্রবাসী রুহুলের কাছ থেকে কলেজ ছাত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
Comments
আরও পড়ুন





