সর্বনাশা মাদকের করাল ছোবল-শহর ও গ্রাম অপরাধের স্বর্গরাজ্য, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তরুণ ও যুবসমাজ!
যে কোন নেশার বস্তু, যেমন ইয়াবা অ্যালকোহল, নিকোটিন ভিত্তিক সিগারেট, গাঁজা ড্রাগ ইত্যাদিতে যে কেমিক্যালগুলি থাকে তা ব্যবহারকারীর শরীরে বেশ কিছু জৈবিক পরিবর্তন ঘটায়। কেউ যখন ওই নেশার বস্তু গ্রহণ করে, তখন ব্রেন ডোপামিন নি:সরণ করে, যাতে আরামের অনুভূতি হয়। ফলে গ্রাহক ব্যক্তি বারবার সেই আমেজ পেতে চায়। না পেলে ওই বিশেষ বস্তুর জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে এবং যে কোনও ভাবে সেই তুরীয় অবস্থায় পৌঁছতে চায়। যেকোনও নেশার বস্তু নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে শরীরের গ্রহণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। না পেলেই উইড্রয়াল সিম্পটম দেখা দেয় এবং সেটা কাটানোর জন্যই আবার ওই বস্তু নিতে হয়। আসক্ত ব্যক্তি মনে করে যে, সে ওই বস্তুটিকে বাদ দিয়ে বাঁচতেই পারবে না। নেশার সামগ্রী তার কাছে তখন খাবার, জল বা অক্সিজেনের মতোই জরুরি হয়ে ওঠে। ক্রমশ নেশার বস্তুর উপর টান বাড়তে থাকে এবং আসক্ত ব্যক্তি কাজকর্ম, বাড়িঘর এবং বন্ধুবান্ধবদের প্রতি দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। যে কোনও নেশায় আসক্তি মানুষের জৈবিক, সামাজিক এবং মানসিক বিষয়ের মিশ্রিত অবস্থা।
হাতের নাগালে মাদক;
ফেনসিডিলকে পিছনে ঠেলে বাংলাদেশের নেশার জগতে এক ভয়াবহ উন্মাদনা এনেছে অনাগ্রা ও ইয়াবা। মাদক সেবনের মূল ভূমিকায় সচ্ছল ঘরের শিক্ষার্থী, তরুণ, যুবা ও মধ্যবয়সী। মোবাইল ফোন ভিত্তিক সুলভ বাজারজাতকরণ, হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা, নারী ও শিশু শ্রম কেন্দ্রিক বিতরণ ব্যবস্থায় ইয়াবার আগ্রাসন দেশের শহর ও গ্রামের সর্বত্র। প্রথম দিকে উচ্চ বিত্ত ঘরের বখে যাওয়া ইয়ো ইয়ো ছেলে মেয়ে এবং মডেল কন্যা “ইয়াবা সুন্দরী” ভিত্তিক বিপণন দিয়ে শুরু হলেও সময়ের সাথে সুলভ হয়ে উঠায় বাহক এবং গ্রাহক হিসেবে শুহুরে নিন্ম মধ্যবিত্ত, পরিবহণ শ্রমিক, ও বস্তির ছেলেদের গন্ডী পেরিয়ে এখন গ্রামীণ কৃষি ও শ্রমজীবীর সন্তানদের হাতের নাগালেও পৌঁছে গেছে ইয়াবা, সাথে কিছু সহযোগী মাদকও। গ্রহণের মাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বেপারোয়া গতির গাড়ি চালনা, ইভটিজিং, এমনকি ধর্ষণও। মাদকের বিষে পড়ে গ্রামীণ এলাকায় ও শহুরে বস্তিতে ছেলেদের পড়া লিখার গন্ডি থমকে আছে, কমছে না স্কুল ঝরে পড়াও।
পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা চাই, চাই পর্যাপ্ত নিরাময় কেন্দ্র;
মাদকের বিস্তার রোধে সমাজ পর্যায়ে, স্থানীয় প্রশাসন পর্যায়ে সর্বোচ্চ সচেতনতা দরকার। মাদকের আসক্তির প্রকার, আসক্তি নির্ণয়-উইথড্র্যাল সিড্রোাম,উইথড্রয়াল সিম্পটমের মোকাবিলা ইত্যাদির জ্ঞান ছড়াতে হবে। পিতা মাতা ও স্কুলের ভুমিকা এখানে অগ্রণী। মাদক সেবীকে ঘৃণা না করে তাকে পরম মমতা ও দায়িত্বশীলতা দিয়ে বিপথ থেকে ফিরাতে পরিবার ও সমাজকে কাজ করতে শিখতে হবে। গড়তে হবে পর্যাপ্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। পর্যাপ্ত মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা তৈরি করা বাংলদেশে একেবারেই ভুলে যাওয়া বহু বিষয়ের একটি।
শেষের কথা-
মাদক সমাজের জন্য অভিশাপ। মাদক আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, আমাদের রাষ্ট্রের তারুণ্য নির্ভর উৎপাদন মুখীতা যে কয়েকটি ভয়ংকর কারণে বাধগ্রস্ত হচ্ছে তার মধ্যে মাদক অন্যতম।
Comments
আরও পড়ুন





