শফিকুলের হত্যার চেষ্ঠায় মদদদাতা নাসির ও নৃশংসতায় অংশ নেয় ইয়াসিন- পুলিশ সুপার

স্টাফ রিপোর্টার: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া তুষখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামকে (৪০) হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষের হামলা ও শরীর থেকে বাম পা বিচ্ছিন্নের ঘটনার রহস্য উৎঘাটন করেছে পুলিশ। এ হামলায় মদদ ও অর্থ দাতা তুষখালী বাজারের ব্যবসায়ী নাসির হাওলাদার ও নৃশংসতা হামলায় নেতৃত্ব দেয় ইয়াসিন খান। মধ্য তুষখালী গ্রামের মৃত হাফেজ খাঁর পুত্র ইয়াসিনকে (৪০) ঢাকা থেকে গ্রেপ্তাারের পর মঙ্গলবার পুলিশের কাছে তার দেয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ এ তথ্য জানান। পরে তার দেয়া তথ্য মতে পৌর শহরের বহেরাতলার খাল থেকে ওই হামলায় ব্যবহৃত দুটি দেশীয় ধারালো দাঁ এবং আসামীর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল পুলিশ জব্দ করে। পিরোজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান (পিপিএম-সেবা) বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে এ ব্যপারে মঠবাড়িয়া থানা কার্যালয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রহস্য উৎঘাটন ও আসামী গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মঠবাড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহীম, মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল, পিরোজপুর জেলা গোয়েন্দা শাখাার ডিবি (দক্ষিণ) আসলাম উদ্দিন, থানার ইন্সপেক্টর আব্দুল হালিম, ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে তুষখালী গ্রামের আইয়ুব আলীর শিকদারের ছেলে ও তুষখালী ইউনিয়নের জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম (৪০) মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের একটি সিআর মামলায় হাজিরা দিতে তুষখালী থেকে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল যোগে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। সকাল সাড়ে নটার সময় মঠবাড়িয়া-পিরোজপুর ব্যস্ততম সড়কের উত্তর মিঠাখালীস্থ ইউসুফ ফরাজীর বাড়ির সামনে পৌছা মাত্রই দূর্বৃত্তরা তাদের ব্যবহৃত মাহিন্দ্র গাড়ি দিয়ে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এসময় শফিকুল রাস্তায় পড়ে গেলে প্রতিপক্ষরা ধারালো দাঁ দিয়ে এলোপাতারি কোপালে শরীর থেকে বাম পা বিচ্ছিন্নসহ পেট কেটে নাড়ি-ভুড়ি বেড়িয়ে যায়। পরে পথচারীদের সহযোগীতায় গুরুতর জখম শফিকুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকের কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে শফিকুল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপরই থানা পুলিশ জড়িত থাকার সন্দেহে তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ছোট ভাই ও ওই বাজারে ব্যবসায়ী নাসির হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করলে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পুলিশ ওই রাতেই হামলায় ব্যবহৃত মাহিন্দ্র গাড়িটি পার্শবর্তী ভা-ারিয়া থানার সিংখালী গ্রাম থেকে উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে থানা পুলিশ বিশ^স্ত সোর্সের সহায়তায় গত ১০ অক্টোবর ওই হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে শফিকুলের প্রতিপক্ষ ইয়াসিনকে ঢাকার লালবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে। ইয়াসিন গ্রেপ্তারের পর ওই হামলায় ৫জন জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে অকোপটে স্বীকার করেন এবং পূর্ব বিরোধের জের মিটাতে তার ওপর হামলা করে। পুলিশ সুপার আরও জানান, এঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ দাতা হলো এজাহার ভুক্ত ১নং আসামী নাসির হাওলাদার।
পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রতিপক্ষ নাসির ও ইয়াসিনের পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইয়াসিন তার সহযোগীদের নিয়ে ঝাউতলার একটি বাসায় একত্রিত হয়। পরের দিন মঠবাড়িয়া পৌর শহরের বাজার হতে তিনটি দাঁ নয় শত টাকা দিয়ে শফিকুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ২৯ সেপ্টেম্বর নাসিরের দেয়া তথ্যমতে শফিকুলের অবস্থান নিশ্চিত করলে গ্রেপ্তারকৃত ইয়াসিন তার সহযোগীদের নিয়ে শফিকুলের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। হামলায় শফিকুলের বাম পায়ের গোরালী সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন ও হাতে, পেটে এবং ডান পা গুরুতর জখম হয়। পরে ইয়াসিনসহ সঙ্গীরা হামলায় ব্যবহৃত মাহিন্দ্র যোগে বহেরাতলা থেকে আলগী-মিরুখালী হয়ে ঢাকার বিভিন্ন যায়গায় পালিয়ে যায়।
প্রেস ব্রিফং-এ আরও বলা হয়, টাকা-পয়সা লেনদেনের জের ধরে গ্রেপ্তারকৃত আসামী নাসির হাওলাদার আহত শফিকুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব বিরোধ থাকায় ইয়াসিনকে হত্যার চেষ্টা মিশনে ভাড়া করে। এজন্য ইয়াসনিকে গত দুই বছরের বিভিন্ন সময়ে নগদ এবং বিকাশের মাধ্যমে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদান করেন। জেল হাজতে থাকা আসামী নাসিরের দোকানে ব্যবহৃত ফোনে ঘটনার দিন সকালে ৯ বার ফোন করে ভিকটিম শফিকুলের অবস্থান নিশ্চিত করে।
থানা সূত্রে যানাযায়, এ ঘটনায় ওই দিন রাতে শফিকুলের মা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে নাসিরকে প্রধান ও সাবেক ইউপি সদস্য ছগিরসহ ৭জন এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার দিন নাসিরকে গ্রেপ্তার করলেও বাকীরা পলাতাক থাকে। অবশেষে থানা পুলিশ ইয়াসিনের সাথে নাসিরের মোবাইল ফোনের কথপকথনের সূত্র ধরে সোমবার ঢাকা থেকে ইয়াসিনকে সন্দেহজনক ভাবে গ্রেফতার করে। ইয়াসিনকে গ্রেফতার করার পর এ ক্লুহীন মামলার রহস্য উদঘাটন করে বলে পুলিশ প্রেসব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেন।
Comments
আরও পড়ুন





