মৎস্য ভিজিএফ চাল নিয়ে নয় ছয় ॥ সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ায় জেলেকে মারধর
স্টাফ রিপোর্টার: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া ইউনিয়নে মৎস্য ভিজিএফ চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও পরিবহন খরচের নামে জেলেদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জেলেদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে সরেজমিনে সাংবাদিকদের কাছে অনিয়ম ও টাকা আদায়ের তথ্য দেয়ায় জনৈক ইউপি সদস্য উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনেই বেল্লাল খন্দকার (২৮) নামের এক জেলেকে মারধর করে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে বলেশ্বর নদ তীরবর্তী বড়মাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিনে গেলে জানা যায়, চলতি বছর জাটকা রক্ষা কর্মসূচির আওতায় অত্র ইউনিয়নে ৩’শ ৬০জন মৎস্যজীবীদের বিশেষ ভিজিএফ এর চাল বরাদ্ধ দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গত ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিল ও মে এই চার মাসে প্রতিজন জেলে মাসে ৪০ কেজি করে চার মাসে মোট ১শ’৬০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও সদস্য কাইয়ুম দাড়িয়ে থেকে শুক্রবার ট্যাগ অফিসারের অনুপস্থিতে ৯০ কেজি চাল কার্ডধারী জেলেদের বিতরণ করেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা কম চাল দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন জানান- ভিজিএফ এর তালিকা ছাড়াও তার ইউনিয়নে আরও কার্ডধারী জেলে রয়েছে। এজন্য সবাইকে চাল ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের চাপে মুখে (ঘাটতি ও খরচ বাবদ-১০কেজি কম) ১৫০ কেজি করে চাল দিতে বাদ্য হন। এসময় সাংবাদিকদের কাছে চাল কম দেয়া ও অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগ করায় সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য কাইয়ুম বেল্লাল খন্দকার (২৮) নামের এক জেলেকে সাংবাদিকদের সামনে মারধর করে।
এসময় কথা হয় ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড উত্তর বড়মাছুয়া গ্রামের জেলে আফজাল আকনের স্ত্রী ফাতিমা বেগম (৩৫) এর সাথে তিনি জানান, শুক্রবার সকালে চাল বিতরণে পরিবহন খরচ বাবদ সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ২শ টাকা এবং ট্যাক্স বাবদ ১শ টাকা মোট ৩শ টাকা নিয়ে চালের স্লিপ দেয়। কিন্তু ট্যাক্সের রশিদ দেয়নি। তিনি আরও জানান- টাকা না দিলে চাল দিবেনা বলে জানালে বাধ্য হয়ে টাকা দেই। ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলে কবির বেপারী (৪৫)ও একই অভিযোগ করেন, চালের কার্ডের জন্য তার কাছ থেকেও ২শ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় চৌকিদার। ১নং ওয়ার্ড খেজুরবাড়িয়া গ্রামের জেলে রুহুল আমিনের পুত্র রুবেল (২৫) অভিযোগ করেন, তার এলাকার সকল কার্ডধারী জেলেদের কাছ থেকে ইউপি সদস্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন। আমি নিজেও ২শ টাকা দিয়ে চাল নেই।
এ ব্যপারে ইউপি চেয়ারম্যান নাসির হোসেন হাওলাদার জানান, তুষখালী গুদাম হতে বড়মাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ১শ মেট্রিক টন চাল আনতে পরিবহন ও শ্রমিকদের খরচ হয় ৯৫ হাজার টাকা। সরকারী ভাবে খরচের টাকা না দেয়ায় ওই ব্যয় মিটানোর জন্য কার্ডধারী জেলেদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়েছে বলে দাবী করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি.এম. সরফরাজ জানান, জেলের কাছ থেকে অবৈধ টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় চালের ঘাটতি ও পরিবহন খরচের জন্য প্রতি জেলের (৪০কেজি) চাল থেকে দুই কেজি করে চাল কম দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জেলেদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার প্রশ্নই আসেনা। অর্থ আদায়ের বিষয়টি বে-আইনী এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Comments
আরও পড়ুন





