বাগেরহাটের গোলাবুনিয়া খালটি দখল-দুষনে মৃত! এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে

আমিনুল ইসলাম সাগর, শরণখোলা: বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলা পরিষদের ঠিক পেছন থেকে বয়ে যাওয়া গোলাবুনিয়া খালটি শত বছরের পুরনো। এটি দখল-দুষনে এখন পরিণত হয়েছে মৃত খালে। খালটির কোথাও হাঁটু ও কোমর সমান পানি। তাও আবার দুই পাড়ের গাছের ঝরাপাতা পঁচে পানি কালো বর্ণ হয়ে গেছে। একটু নাড়া পড়লেই ছোটে দুর্গন্ধ। সেই দুষিত পানিতেই দুই পাড়ের বাসিন্দাদের সারা বছর চলে গোসল করা, রান্না-বান্নাসহ সমস্ত সাংসারিক কাজ।
এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম রাজৈর বান্দাঘাটা আকন বাড়ি থেকে শুরু হয়ে গোলবুনিয়া তালুকদার বাড়িসংলগ্ন ফসলি জমিতে গিয়ে শেষ হয়েছে খালটি। যার দৈর্ঘ্য হবে তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার। খালটি জন্মের পর থেকে আর সম্পূর্ণভাবে খনন হতে দেখেনি কেউ। পক্ষান্তরে মৃত খালটিতে চলছে দখলের প্রতিযোগীতা। দুই পাড়ের বাসিন্দাদের যে যার সীমানা ভরাট করে বাড়িয়ে নিচ্ছে তাদের জমি। কেউ কেউ তাদের সীমানার দুই পাশে অবৈধভাবে বাধ দিয়ে ব্যক্তিগত পুকুর বানিয়ে ব্যবহার করছে। চলাচলের রাস্তাও বানিয়েছে অনেকে। এভাবে কমপক্ষে ১০টি বাঁধ রয়েছে খালটিতে। একারণে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে আরো পঁচা নালায় পরিণত হয়েছে খালটি। পানির কষ্টে খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে হাহাকার পড়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এই খালটির ওপর দুই পাড়ের প্রায় দেড় হাজার পরিবার নির্ভরশীল এবং পশ্চিম রাজৈর, গোলবুনিয়া এবং নলবুনিয়ার প্রায় এক হাজার একর ফসলি জমির চাষাবাদ। কিন্তু খালটি সচল না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বাড়িঘর, জমির ফসল ডুবে যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার করতে হয়।
সরেজমিনে খালটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, খালের পানির উপরিভাগে গাছের পাতা, ময়লা, আবর্জনা সরিয়ে নারী-পুরুষ, শিশুরা পঁচা পানিতে গোসল করছেন। এসময় বিধবা জাহানারা বেগম (৬৫) বলেন, এই পানি দিয়া গোসলের পর গা চুলকায়। তার পরও এই পানি দিয়া ধোয়াফালা, গোসল, রান্না সবই করতে হয়। পশ্চিম রাজৈর গ্রামের আনিস আকন (৮০) বলেন, পানির অভাবে মোগো জীবন শেষ। ঠেকায় পড়ে মাঝে মাঝে এই দুষিত পানি খাওয়াও লাগে।
কামাল আকন (৪৮) বলেন, খাল ভরাট হওয়ার সুযোগে যে যার সুবিধামতো বান্দা দিয়া কেউ পুকুর, কেউ খালের ওপর রাস্তা বানাইছে। মাহবুব তালুকদার (৬০) বলেন, খালটির বয়স প্রায় ১শ বছর। প্রশাসন, চেয়ারম্যান মেম্বরের কাছে বহুবার খাল কাটার দাবি জানাইছি। কিন্তু কেউ এই এলাকার মানুষের খোঁজ রাখে না। গোলবুনিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার জানান, গতবার অতিবৃষ্টিতে তার প্রায় পাঁচ বিঘা জমির কলাই নষ্ট হয়ে যায়। পানিতে ডুবে পাকা ধানও পঁচে যায়। এভাবে তাদের গ্রামের শত শত একর জমির ফসল পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গোলবুনিয়ার খালটি সচল থাকলে তাদের এমন ক্ষতি হতো না। খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, দুই বছর আগে মৎস্য অধিদপ্তরে খালটি খননের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তা পাস হয়নি। নতুন করে অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এটি খনন করার যায় কিনা সেই চেষ্টা করা হবে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, খালটি পুন:খননের জন্য শিগগিরই উদ্যাগ নেওয়া হবে। তাছাড়া, পানি প্রবাহ সচল রাখতে অবৈধ বাধ অপসারণ এবং খালের মুখে একটি গভীর কালভার্ট নির্মাণের জন্য এলজিইডি দপ্তরে কথা বলা হবে।
Comments
আরও পড়ুন





