করোনার লকডাউনের ফাঁদে সুন্দরবনে হরিণ শিকারের চলছে মহোৎসব
নজরুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি, শরণখোলা: চলোমান করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশ যখন লক্ ডাউনের ফাঁদে তখন পুর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ সংলগ্ন এলাকার কিছু অসাধু বনজীবি বনের মায়াবী চিত্রল হরিণ নিধনে মেতে উঠেছে। ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে তারা গোপনে মাংশ বিক্রি করছে। কখনোবা জীবিত হরিণও পাচার করে দেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ভয়াল নভেল করোনা ভাইরাসের ছোবলে সারা দেশ যখন লক ডাউনের শিকলে বন্ধি বনের প্রতি বনবিভাগের নজরদারী যখন অনেকটা শিথিল সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে দূর্নীতিবাজ শিকারীরা। গত ১ মাসে হরিণ পাচারের অন্তত ১০ টি ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাতে বনের টিয়ারচর এলাকায় পাচারের অপেক্ষায় থাকা ২২ টি বন্ধি হরিণ উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করে বন বিভাগ। এসময় ৩০ কেজি মাংশ ও তিন শিকারীকেও আটক করা হয়। গত ২ মে কচিখালীর টিয়ারচর থেকে ১২ শ হরিণ ধরার ফাদ ও দুই শিকারীকে আটক করে বনবিভাগ।
এসময় সুন্দরবন থেকে পাচার হয়ে যাওয়া ২ টি মায়াবী চিত্রল হরিণ মঠবাড়িয়া থেকে উদ্ধার করা হয়। এদিন সোনাতলা গ্রাম থেকে ১৫ কেজি হরিণের মাংশ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এদের মাঝে বার্কিং ডিয়ার নামের একটি বিলুপ্ত প্রজাতির হরিণও রয়েছে। করোনা ভাইরাস জণিত লকডাউনের কারনে সুন্দরবন কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার জেলে বাওয়ালীরা গোপনে হরিণ শিকার করে বিক্রি করছে বলে অনেকের অভিমত।
বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। এ বনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। বনের ৭০ ভাগ রয়েছে সুন্দরী, পশুর, কেওড়া, গেওয়া হেন্দাল, গরান, গোলপাতা বেষ্টিত। বাকি ৩০ ভাগ নদী-খালবিল বেষ্টিত।
বনের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মায়াবী চিত্রল হরিণ। এক সময় চোরা শিকারীদের খপ্পরে পড়ে সুন্দরবন যেমন হয়েছিল শ্রীহীন, তেমনি বনের হরিণও যাচ্ছিল বিলুপ্তির পথে। বিগত কয়েক বছরে বনবিভাগের ব্যপক নজরদারী স্মার্ট টীমের ঝটিকা অভিযান ও বনসুরক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সচেতনতা মূলক কর্মসূচীর কারনে সুন্দরবনের হরিণ শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সুন্দরবন ফিরে পায় তার হারানো রুপ-লাবন্য।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে গত এক মাস ধরে সুন্দরবনে হরিণ শিকার অনেকটাই বেড়ে গেছে। গত ১ মাসে বনরক্ষিরা শরণখোলাসহ পার্শ্ববর্তি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে দুটি মাদী হরিন (স্ত্রী) জীবিত উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করেন। বনবিভাগ আরও জানায়, এমাসের প্রথম দিকে বনের চান্দেশ্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বনরক্ষিরা বিপুল পরিমান হরিণ ধরার ফাঁদ উদ্ধার করেন। সম্প্রতি বনের কচিখালী থেকেও ব্যপক সংখ্যক হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করা হয়।
সুন্দরবনের মৎস্য ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন শেলু জানান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এবং পাশ-পার্মিট চালু না হলে সুন্দরবনের হরিণ শিকার আরও বেড়ে যেতে পারে। স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চু মুন্সী জানান, চলমান অবস্থায় বনজীবীদের মাঝে নিয়মিত খাদ্য সহায়তা সরবরাহ করলে হরিণ শিকারে নিরুৎসাহিত হতে পারে শিকারীরা।
জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন বলেন, সুযোগ সন্ধানী শিকারী চক্র সুন্দরবনে ঢুকে হরিণ শিকারে তৎপর রয়েছে। তবে বনবিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছে।
Comments
আরও পড়ুন





