একজন নিরপরাধী ব্যক্তি অপরাধী হয়ে উঠতে পারে যেভাবে ॥ আমাদের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট

বর্তমান আধুনিক সমাজ সভ্যতা আজ একটি বিচিত্র অধ্যায়ের সম্মুখীন। আজকের সমাজে ঘটছে অনেক ধরনের বাস্তবিক বা কাল্পনিক ঘটনা। যার সত্যতা সম্পর্কে আসলে মানুষ কতটা অবগত হয় সেটাই হচ্ছে বিষয়! বর্তমান সময়ে চলমান সকল ঘটনাই সংগঠিত হচ্ছে সত্য অসত্যের সমন্বয়ে। অথবা অসত্যের আড়ালে নিমজ্জিত হচ্ছে বাস্তব সব ঘটনা। আর এভাবেই মানুষের মাঝে অপরাধের প্রবণতা বিকশিত হচ্ছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে। একজন অপরাধী যেমন সিস্টেমের ফাঁকতালে বেড়িয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমনি নিরপরাধী হচ্ছে অপরাধী। সুবিচার প্রাপ্তির জন্য মানুষ আদালতের শরণাপন্ন হয়। আবার অন্যায়ভাবে কাউকে অযথা হয়রানির জন্য আদালতের সম্মুখে দাড় করার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। অনেক সময় আদালতের রায় সাক্ষী প্রমাণ সাপেক্ষে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় সত্যের বিরুদ্ধে যেতে পারে এবং সুবিচার পেতে ব্যর্থ হতে পারে। এমতাবস্থায় আদালতে বিচার প্রার্থী ব্যক্তি সুবিচার পেতে ব্যর্থ হয়ে নিজেও পরবর্তীকালে অপরাধে লিপ্ত হতে পারে। অপরপক্ষে, কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অযথা হয়রানি করার উদ্দেশ্যে যদি অভিযুক্ত করা হয় এবং কোন কারনে যদি নিরপরাধ ব্যক্তিটি সাজা ভোগ করে তাহলে সাজা ভোগের পর বিচারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তার মধ্যে অপরাধ প্রবনতা জাগতে পারে। আবার এমনও বিচিত্র নয় যে কোন যথার্থ অপরাধী উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে নিরপরাধ বলে খালাস পেতে পারে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত অভিযোগকারী তার অভিযুক্ত আসামীর খালাস প্রাপ্তিকে কোনক্রমেই মেনে নিতে পারেন না। এতে একদিকে সে যেমন বিচার ব্যবস্থার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হতে পারে অন্যদিকে এটাও শিক্ষা পেতে পারে যে অপরাধ করেও খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ধরনের নিরপরাধ ব্যক্তিও পরবর্তীতে অপরাধে লিপ্ত হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একজন মাদক বিক্রেতা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আসলে এই বিক্রেতা কে? তার আসল রহস্য উদঘটিত হচ্ছে না উপরন্তু এই মাদককে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্যকে দমিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে। ২/৪ জন চুনোপুঁটি কারবারি কে ধরিয়ে দিয়ে এই মাদক চোরাকারবারিরা পর্দার অন্তরালেই রয়ে যাচ্ছে। যেনো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। অধিকন্তু, যে সব যথার্থ অপরাধী কারাগার বা সংশোধনীমূলক স্কুলে শাস্তি ভোগ করেন তারা কারাগার এবং সংশোধনীমূলক স্কুলের নানা ধরনের অপরাধীর সংস্পর্শে আসার সুযোগ লাভ করে। এতে শাস্তি ভোগের ফলে অথবা চারিত্রিক সংশোধনীর ফলে ব্যক্তির মধ্যে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস না পেয়ে বরং বহুগুণে তা বৃদ্ধি পেতে পারে।
পক্ষান্তরে, এমন ঘটনাও বিচিত্র নয় যে অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য সন্দেহমূলকভাবে অভিযুক্ত করা হয় এবং তাকে সাময়িকভাবে কারাগারে রাখা হয়। এমতাবস্থায় প্রকৃত নিরপরাধ ব্যক্তিটি কারাগারের অন্যান্য অপরাধী ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে অথবা নেহায়েত মানসিক প্রতিক্রিয়ার ফলে পরবর্তীতে অপরাধে লিপ্ত হতে পারে।
অতএব সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যাতে এই সকল অপরাধ বা হয়রানির শিকার না হয় ও আইনের অপপ্রয়োগের ফলে নিরপরাধী ব্যক্তিকে যেনো অপরাধী হতে না হয় সেজন্য সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকা সমাজের প্রত্যেকের জন্য বাঞ্ছনীয়।
লেখক- তরিকুল ইসলাম রুবেল, এল.এল.বি (সম্মান), এল.এল.এম
Comments
আরও পড়ুন





