যৌতুক না পেয়ে নবধূকে তিনদিন আটকে রেখে স্বামীর নির্যাতন ॥ আহত মিতুকে শেবাচিমে স্থানান্তর
স্টাফ রিপোর্টার: বিদেশে যাওয়ার তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি তুলে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে আটকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। পরে আহত গৃহবধূকে হাসপাতালে না নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে শালিসীর কথা বলে তার পরিবারের লোকজনকে খবর দেয় গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গুরুতর আহত গৃহবধূকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে বাপের বাড়ির লোকজন। গৃহবধূ মিতু মঠবাড়িয়া উপজেলার সবুজনগর গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে। গৃহবধূ মিতু আক্তার (১৯) গত দুইদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন থাকার পর তার অবস্থার অবনতি ঘটলে বিকেলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
নির্যাতিত গৃহবধূ মিতুর মা পাখি বেগম অভিযোগ করেন, গত ছয়মাস আগে পারিবারিক সম্মতিতে পার্শ্ববর্তী বরগুনা উপজেলার কড়ইতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসি মো. জাহাঙ্গীর আকনের ছেলে মো. জাহিদ আকনের সাথে মিতুর আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বরপক্ষের সকল দাবি দাওয়া পূরণ করে কনে পক্ষ। সেই সাথে বিয়ের সময় স্বামী জাহিদ ঢাকায় চাকুরি করেন এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ বিয়ে করে। বিয়ের পর বেকার জাহিদ নানা ভাবে স্ত্রীকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। স্বামী জাহিদের পিতা সৌদি প্রবাসি। গত ১৫দিন আগে সে বাড়িতে আসলে মিতুর পরিবারকে দাওয়াত দিয়ে তাদের বাড়িতে নেন। এরপর দুই পরিবারের বৈঠকে মিতুর স্বামী বেকার জাহিদের বিদেশ পাঠানোর কথা ওঠে। নব বধূ মিতুর পরিবারের কাছে বিদেশ যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা দাবি করে স্বামী জাহিদের পরিবার। মিতুর পরিবার এ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর থেকেই স্বামী ও পরিরারের লোকজন গৃহবধূ মিতুর ওপর নির্দয় আচরণ শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার জাহিদ তার স্ত্রীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্দয়ভাবে পেটায়। সাত দিনের মধ্যে টাকা না দিলে জানে মেরে ফেলবে এমন হুমকী দেয়। এ নির্যাতনে গৃহবধুর শ্বাশুরি কনক বেগম ও ননদ শেফালি আক্তারও অংশ নেয়। গৃহবধূ গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে তার পরিবারের কাছে শালিসীর কথা বলে বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়ন পরিষদে আসতে খবর দেন। মিতুর পরিবারের স্বজনরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে মিতু গুরুতর আহত অবস্থায় দেখেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মিতুকে তার পরিবারের কাছে তুলে দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। পরে মঠবাড়িয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানের সহায়তায় মিতুকে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোনিয়া আক্তার বলেন, গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটুনীর দাগ রয়েছে। তাকে মারধর করা হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে । সে শারিরীক ও মানসিক অসুস্থ। সুস্থ হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
এ ব্যপারে গৃহবধু মিতুর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মাসুদুজ্জামান জানান- নির্যাতনের বিষয়টি মৌখিক ভাবে শুনেছি। এ বিষয় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।