আজ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সকাল ৭:১৩

  • বাংলা English
সদ্য :

☉ নব নির্বাচিত এমপিকে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের ফুলেল শুভেচ্ছা☉ প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন \ ঘাতক সিরাজুল গ্রেপ্তার☉ মঠবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ে রোধে তারুণ্যের কন্ঠ অনুষ্ঠিত☉ অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালকারীদের কোন ছাড় নয়☉ বখাটে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বড়মাছুয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানববন্ধন☉ মঠবাড়িয়া-বড়মাছুয়া সড়কে কার্পেটিং কাজে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার : পিচ-পাথর নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ☉ বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আবদুর রশিদ মানিক মিঞা’র দাফন সম্পন্ন☉ ছাত্রলীগ নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রতাহারের দাবিতে মানববন্ধন☉ মঠবাড়িয়ায় থানার ওসি প্রত্যাহার☉ ১৮ মামলার আসামী ফল সোহেলসহ গ্রেপ্তারকৃত-১২জন জেল হাজতে

মহান আল্লাহর মহান দান ॥ শব-ই-ক্বদর

মহান আল্লাহর মহান দান ॥ শব-ই-ক্বদর

মহান আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদীকে যে সকল বিশেষ নেয়ামত দান করেছেন পবিত্র শব-ই-ক্বদর তার মধ্যে অন্যতম। শব শব্দটি ফারসী যার অর্থ রাত আর ক্বদর শব্দটির কয়েকটি অর্থ আছে যেমন: মহাত্ম্য, সম্মান, তাকদীর, ভাগ্য নির্ধারণ ইত্যাদি। সুতরাং শব-ই-ক্বদর অর্থ হল- সম্মানের রাত, মহাত্ম্যের রাত, তাকদীরের রাত। ভাগ্য রজনী ইত্যাদি। নি¤েœ আমার শব-ই-ক্বদর কি ও কেন? ও এর ফজিলত নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াশ পাব।
কুরআন যা বলে:
০১. পবিত্র কুরআনুল কারীমে সুরা ক্বদরে মহান আল্লাহ বলেন, “ক্বদরের রাতের এবাদাত হাজার মাসের এবাদাতের চেয়েও উত্তম।”
০২. সুরা ক্বদরে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, “ এ রাতে হযরত জিব্রাইল (আ:) ফিরিশতাগনসহ তাদের প্রভূর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ন কাজের জন্য অবতীর্ণ হয়।
০৩. সুরা দুখানে এ রাতের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,“ আমি এ কুরআন নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ন বিষয় স্থিরিকৃত হয়।”
হাদীস যা বলেন:-
০১. হযরত আনাস বিন মালিক রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স:) বলেছেন“ যখন ক্বদরের রাত আসে তখন জিব্রাইল (আ:) একদল ফিরিশতা নিয়ে পৃথিবীতে আসেন এবং প্রত্যেক দাড়ানো, বসা ও জিকিরে রত বান্দার জন্য আল্লাহর রহমাত কামনা করেন, ও আল্লাহর দরবারে মা চাইতে থাকেন। অত:পর যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে তখন আল্লাহ তাদের নিয়ে ফিরিশতাগনের সাথে গর্ব করে বলেন, হে আমার ফিরিশতাগন যে কর্মচারী তার দায়িত্ব পূর্ণভাবে আদায় করেছে তার পুরস্কার কি হওয়া উচিত? তখন জবাবে ফিরিশতাগন বলেন, হে আমাদের প্রভূ তার পরিপূর্ণ পুরস্কার পাওয়া উচিৎ। তখন আল্লাহ তায়ালা আবার বলেন, হে আমার ফিলিশতাগন আমার বান্দবান্দিগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্নরুপে আদায় করেছে। আবার তারা ঈদগাহে এসে হাত তুলে উচ্চস্বরে দোয়া করছে। আমার ইজ্জত, মহত্ব, সম্মান উচু অবস্থান ও বড়ত্বের কছম করে বলছি আমি তাদের দোয়া কবুল করব। অত:পর আল্লাহ ঐ বান্দাদের বলেন তোমরা ঘরে ফিরে যাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তোমাদের অন্যায় গুলোকে ন্যায় কাজ হিসেবে রুপান্তরিত করে দিয়েছি। আল্লাহর রাসুল (স:) বলেন, আর তখন শব-ই-ক্বদরে এবাদত করা লোকগুলো ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ঘরে ফিরে যায়।”(বায়হাকি শরীফ)
০২. রাসুলে কারমী (স:) অন্য হাদীসে বলেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও সওয়াবের আশা নিয়ে শব-ই-ক্বদরের এবাদাত করবে তার জীবনের পূর্বপর গুনাহ মা’ফ হয়ে যাবে।” (মুসনাদে আহমাদ)
০৩. উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “ আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল’ আমি যদি শব-ই-ক্বদর চিনতে পারি তাহলে সে রাতে আমি বলব? জবাবে তিনি বলেন, সে রাতে তুমি বল, হে ক্ষমাশীল আল্লাহ ক্ষমাকারী আপনি খুব পছন্দ করেন কাজেই আপনি দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন।” (মুসনাদে আহমাদ)
০৪. হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বণিত তিনি বলেন, রাসুল (স: রমজানের শেষ দশদিন এতবেশী এবাদাত করতেন যতবেশী এবাদাত তিনি আর কখনও করতেন না-(মুসলিম শরীফ) এই দশদিনে বেশী এবাদাত করতেন কারন এই দশদিনের মধ্যেই রয়েছে শব-ই-ক্বদর।
শব-ই-ক্বদরের এত মর্যাদার কারণ:
মূলত: উম্মতে মোহাম্মাদীকে অন্যান্য উম্মতের উপর মর্যাদাবান করার জন্যই আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতকে দয়া করে এ রাতটি উপহার দিয়েছেন।
হযরত আবি হাতেম (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স:) একবার বণী-ইসরাঈলের এমন একজন মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন তিনি এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জেহাদে মশগুল ছিল। একথা শুনে সাহাবায়ে কিরাম আশ্চর্য হলেন এবং ভাবলেন আমাদের হায়াত কম আমরা কিভাবে পূর্ববর্তী উম্মতের মত এতবেশী এবাদাত করব এবং তাদের মত মর্যাদাবান হব? তখন মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা ক্বদর নাজিল করে ঘোষণা দিলেন তোমাদের আমি লাই-লাতুল ক্বদর বা শব-ই-ক্বদর দিলামে যে রাতের এবাদাতরে মর্যাদা বণী-ইসলাঈলের বর্ণিত আবেদের এবাদাতের চেয়ে বেশী দামী হবে। শব-ই-ক্বদরের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মোহাম্মাদীর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান দিয়েছেন। (মাযহারী)
সেরাত কোনরাত?
এক বছরে একটি রাতই শব-ই-ক্বদর কিন্তু প্রশ্ন হল সে রাত কোন রাত? ইসলামী পন্ডিতগণ কোন একটি রাতের ব্যাপারে একমত পোষণ করতে পারেননি। যদিও ২৭শে রমজানের রাতকেই ইমাম আজম আবু হানিফা (র:) সহ অনেক পন্ডিত শব-ই-ক্বদর বলে মতামত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (রা:) হাদীসের দলিলের পাশাপাশি একটি সুন্দর যুক্তি পেশ করেছেন। যুক্তিটি হল আরবীতে একটি প্রবাদ আছে যার বাংলা হল: “কোন বিজ্ঞজনের কোন কথাই বিজ্ঞতা থেকে খালী নয়”। আর মহান আল্লাহ হলেন সকর বিজ্ঞজনের স্রষ্টা মহাবিজ্ঞানী। সুতরাং আল্লাহর কথাই বা বিজ্ঞতা থেকে খালী হবে কেন? অত:পর তিনি বলেন সমস্ত কুরআন শরীফে লাইলাতুল ক্বদর শব্দটি তিনবার এসেছে। শব্দটি লিখতে নয়টি অক্ষর লাগে। উহাকে তিন দ্বারাগুণ করলে সাতাশ হয়। কাজেই ২৭শে রমজানই শব-ই-ক্বদর হওয়ার কথা।
বুখারী শরীফে বর্ণিত হাদীসে আছে হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, রাসুল (স:) বলেছেন তোমরা রমজান মাসের শেষ দশদিনের বিজোড় রাত গুলোতে শব-ই-ক্বদর খোঁজ।
এরাত কুরআন নাজিলের রাত:
শব-ই-ক্বদরে পবিত্র কুরআনুল কারীম নাজিল করা হয়েছে; মহান আল্লাহ বলেন, “আমি এ কুরআনকে ক্বদরের রাতে নাজিল করেছি”। সুতরাং আমাদের উচিৎ হবে ক্বদরের রাতে বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত সহ কুরআনের আমল করা।
তাকদীর নির্ধারণের রাত
আল্লাহ তায়ালা সুরা ক্বদরে বলেছেন, “এ রাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমুহ নিয়ে ফিরিশতাগন ও সরদার ফিরিশতা জিব্রাইল নাজিল হয়।” আবার সুরা দুখানে বলেন, “ আমি উহা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে, যে রাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমুহ স্থিরীকৃত হয়।” এ আযাতের তাফসীরে কোন কোন মুফাসসীর বলেছেন, বরকতময় রাত দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে। আবার কোন কোন মুফাসসীর বলেছেন, এ রাত দ্বারা শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। এ আয়াতের তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রা:) বলেছেন,“ আল্লাহ তায়ালা সারা বছরের তাকদীর সংক্রান্ত ফয়সালা শবে বরাতে করেন। অত:পর শবে-ক্বদরে এ সব ফয়সালা সংশ্লিষ্ট ফেলেশতাগনের নিকট সোপর্দ করেন।” (তাফসীরে মাযহারী)
এ রাতে তাকদীর অর্থ বিষয়াবলী নিস্পন্ন হওয়ার অর্থ এ বছর যে সব বিষয় প্রয়োগ করা হবে, সেগুলো লাও হে মাহফুজ থেকে নকল করে ফিরিশতাগণের কাছে সোপর্দ করা। নতুবা আসল বিধি লিপি আদি কালেই লিপিবদ্ধ হয়ে আছে।
এ রাতে করণীয়:
হযরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, রাসুল (স:) রমজানের শেষ দশদিন আসিলে এবাদাতের লক্ষ্যে পরনের কাপড়ের রশি মজবুতভাবে বেধে নিতেন, সারারাত এবাদাৎ করতেন এবং নিজের আহল পবিজনকে এবাদাতের জন্য জাগিয়ে দিতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত শবে-ক্বদর ঘুমানোর রাত নয় বরং জাগ্রত থেকে এবাদাত করার রাত। এরাতে আমরা যে সকল এবাদাত করতে পারি তা হল:
০১. বেশী বেশী নফল নামাজ পড়া।
০২. কোরআন তেলাওয়াত করা
০৩. জিকির আজকার করা
০৪. দ্বীনী আলোচনা করা
০৫. কবর জিযারত করা
০৬. ইসালে সওয়ার করা
০৭. মিসকিনদের দান সদকা করা
০৮. বেশী বেশী এস্তেগফার করা
০৯. নিজ প্রয়োজনে দোয়া করা
১০. মানুষের কল্যাণে কাজ করা।
১১. নবীজি (সঃ) দরুদ ও সালাম পেশ করা।

আল্লাহ তায়ালা এ রাতের হক আদায় করে এবাদাত করার তাওফীক আমাদের দান করুন। (আমীন)


লেখক: আলহাজ্ব মাওলানা মো: সিদ্দিকুর রহমান
পেশ ইমাম ও খতিব, মঠবাড়ীয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

উপাধ্যক্ষ, টিকিকাটা নূরাীয়া ফাজিল মাদ্রাসা।

Comments

comments

আরও পড়ুন

নব নির্বাচিত এমপিকে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের ফুলেল শুভেচ্ছা
নব নির্বাচিত এমপিকে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের ফুলেল শুভেচ্ছা
নব নির্বাচিত এমপিকে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের ফুলেল শুভেচ্ছা
প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন \ ঘাতক সিরাজুল গ্রেপ্তার
প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন \ ঘাতক সিরাজুল গ্রেপ্তার
প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন \ ঘাতক সিরাজুল গ্রেপ্তার
মঠবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ে রোধে তারুণ্যের কন্ঠ অনুষ্ঠিত
মঠবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ে রোধে তারুণ্যের কন্ঠ অনুষ্ঠিত
মঠবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ে রোধে তারুণ্যের কন্ঠ অনুষ্ঠিত
অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালকারীদের কোন ছাড় নয়
অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালকারীদের কোন ছাড় নয়
অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালকারীদের কোন ছাড় নয়
বখাটে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বড়মাছুয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানববন্ধন
বখাটে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বড়মাছুয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানববন্ধন
বখাটে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বড়মাছুয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানববন্ধন
মঠবাড়িয়া-বড়মাছুয়া সড়কে কার্পেটিং কাজে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার : পিচ-পাথর নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ
মঠবাড়িয়া-বড়মাছুয়া সড়কে কার্পেটিং কাজে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার : পিচ-পাথর নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ
মঠবাড়িয়া-বড়মাছুয়া সড়কে কার্পেটিং কাজে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার : পিচ-পাথর নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ