বড়মাছুয়ায় জেলেদের ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ১১নং বড়মাছুয়া ইউনিয়নের জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের ভিজিএফ এর চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দুই দফা চাল বিতরণের চিঠি উপেক্ষা করে নির্ধারিত (ঈদুল ফিতরের আগে ১২ মে) সময়ে চাল বিতরণ না করে ইউপি চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ইউনিয়নের তদারকি কর্মকর্তার (ট্যাগ অফিসার) উপস্থিতিতে সরকারী ৫০ কেজির ইনটেক বস্তা খুলে বালতি দিয়ে দু’মাসের চালে জনপ্রতি দশ থেকে বার কেজি চাল কম দেয়। এতে জেলেদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষুব্ধ জেলেরা ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাংবাদিকদের অবহিত করলে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা এলাকায় গিয়ে এর সত্যতা পান।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা সরকারী ইনটেক পঞ্চাশ কেজি ওজনের বস্তা খুলে জেলেদের বস্তায় ওজন মাপা যন্ত্র ছাড়াই বালতি দিয়ে মেপে বস্তায় ভরে দিচ্ছেন। খোজ নিয়ে জানা যায়-বড়মাছুয়া ইউনিয়নে জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকা ৮শ’ ৭৫ জন জেলের জনপ্রতি চল্লিশ কেজি করে এপ্রিল ও মে দু’মাসে আশি (৮০) কেজি চাল দেয়ার জন্য ৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ পেয়ে সরকারী গোডাউন থেকে উত্তোলন করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়াম্যান নাসির হোসেন হাওলাদার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা পল্লী দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার প্রতি জেলে পরিবারের মাঝে দশ থেকে এগার কেজি ওজনে কম দিয়ে বালতি দিয়ে মেপে বিতরণ করেন।
অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গেলে ওই ইউপির ৬ নং ওয়ার্ড উত্তর বড়মাছুয়া গ্রামের মৃত. মানিক আকনের ছেলে জেলে মো. সাইয়েদ আকন (৫২) তার চাল ওজন করে দেখা যায় দু’মাসের আশি কেজির পরিবর্তে তাকে ঊনসত্তর কেজি চাল দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে ভয়ে রাজী হয়নি। ওই ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত. রুহুল আমিনেরে পুত্র জেলে পাভেল (৩২) এর দুই বস্তার চালে সত্তর কেজি চাল দেখা যায়।
স্থানীয় জেলেরা জানান, তাদের প্রত্যেককে নির্ধারিত ৮০ কেজি চালের পরিবর্তে দশ থেকে এগার কেজি চাল ওজনে কম দেয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, আমরা চেয়ারম্যানের কাছে জিম্মি। এর প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছিনা।
৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম টুকু বিভিন্ন খরচ নির্বাহের জন্য মৎস্য ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে দশ কেজি করে কম দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান নাসির হোসেন হাওলাদার দশ কেজি চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা প্রতি জেলেকে ৮০ কেজি চালের পরিবর্তে ছিয়াত্তর (৭৬) কেজি চাল দেই। তিনি আরও বলেন, চাল পরিবহনে ঘাটতি, শ্রমিকদের মজুরী ও কার্ড বঞ্চিত হতদরিদ্র দুস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য চার কেজি করে চাল কম দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, খাদ্য গুদাম হতে চাল উত্তোলনে তাদের অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার উপস্থিতিতে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কার্ডধারী জেলেদের ৮০ কেজি করে চাল দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। চাল কম দিয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এখন থেকে সঠিক ওজনে চাল বিতরণ করা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন তালুকদার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মি ভৌমিকের নির্দেশনা পেয়ে বড়মাছুয়া গিয়ে ওজন মাপা মিটার দিয়ে নির্ধারিত ওজনের চাল মেপে বিতরণ করার ব্যবস্থা করা হয়।
জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, মৌখিক অভিযোগ পেয়েই তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেই।