আজ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সকাল ১০:৪৪

  • বাংলা English
সদ্য :

☉ নব নির্বাচিত এমপিকে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের ফুলেল শুভেচ্ছা☉ প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন \ ঘাতক সিরাজুল গ্রেপ্তার☉ মঠবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ে রোধে তারুণ্যের কন্ঠ অনুষ্ঠিত☉ অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালকারীদের কোন ছাড় নয়☉ বখাটে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বড়মাছুয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানববন্ধন☉ মঠবাড়িয়া-বড়মাছুয়া সড়কে কার্পেটিং কাজে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার : পিচ-পাথর নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ☉ বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আবদুর রশিদ মানিক মিঞা’র দাফন সম্পন্ন☉ ছাত্রলীগ নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রতাহারের দাবিতে মানববন্ধন☉ মঠবাড়িয়ায় থানার ওসি প্রত্যাহার☉ ১৮ মামলার আসামী ফল সোহেলসহ গ্রেপ্তারকৃত-১২জন জেল হাজতে

আমরা চাইনা কোন মেয়ে বাল্য বিয়ের শিকার হোক

আমরা চাইনা কোন মেয়ে বাল্য বিয়ের শিকার হোক

রুবেল মিয়া: আমাদের দেশে বহুল আলোচিত সামাজিক সমস্যা হচ্ছে বাল্য বিবাহ। বাল্য বিবাহের অনেক কারণ রয়েছ। উল্লেখযোগ্য কারণ হলো মেয়েদের বোঝা স্বরূপ ভাবা, ইভটিজিং, অর্থাভাব, সামাজিক অসচেতনতা, যৌন হয়রানি, কুসংস্কার ইত্যাদি। বাল্য বিবাহ তথা শিশু বিবাহ আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দীর্ঘকালীন সমস্যা। সু-প্রাচীনকাল থেকে এটি প্রথা হিসেবে এ দেশে বিদ্যমান হয়ে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ অমানবিক প্রথা মানুষকে অবমূল্যায়ন করছে। বৃদ্ধি করছে সামাজিক সমস্যা, বয়ে নিয়ে আসছে মানব সমাজে অনাকাঙ্খিত দু:খ দুর্দশা। আমাদের পারিবারিক নানা সমস্যা যেমন- দাম্পত্য কলহ, অশান্তি, বিবাহ বিচ্ছেদ, পারিবারিক সহিংসতা এসবের জন্য দায়ী মূলত বাল্য বিবাহ বা শিশু বিবাহ।
বাল্য বিবাহের ধারণা :
সাধারণ ভাবে শিশুকাল অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে যে বিবাহ সম্পন্ন হয় তাই বাল্য বিবাহ। নারীকে তার মানসিক প্রস্তুতির পূর্বে বৈবাহিক ও সন্তান গ্রহনের গুরু দায়িত্ব নিতে হয়।
বাল্য বিবাহের কারণ :
বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের জন্য দায়ী মূলত এ দেশের প্রচলিত সামাজিক প্রথা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দারিদ্র বাল্য বিবাহকে উৎসাহিত করে। দারিদ্রতার কারণে অনেক সময় বিবাহের বয়স হওয়ার আগে পিতা-মাতা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠায়। এছাড়াও ইভটিজিং, যৌন হয়রানী, অশ্লীলতা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এজন্য পরিবার এসব অপ্রীতিকর ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেতে মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়।
বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ পরিস্থিতি :
বাংলাদেশ বিশ্বে বাল্য বিবাহ প্রবণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইউনিসেফ পরিচালিত ‘স্টেট অফ দি ওয়ার্ল্ড’স চিলড্রেন রিপোর্ট ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে শতকরা ৬৬ ভাগ নারীদের বিবাহ হয় ১৮ বছরের পূর্বে এবং এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বিবাহ হয় ১৫ বছরের পূর্বে। এর কারণে দেখা গেছে বাংলাদেশের নারীদের ৪৮ শতাংশ বিবাহ অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ বা বৈধব্য গ্রহণ করে ১৮-১৯ বছর বয়সের মধ্যে। যার জন্য দায়ী মূলত বাল্য বিবাহ।
বাল্য বিবাহের প্রভাব :
বাল্য বিবাহ পরিবার কেন্দ্রিক সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম। যা সমাজে একটি বিরাট প্রভাব ফেলে। এর কারণে একদিকে যেমন মানবিক জীবনের ক্ষতি সাধন হয় তেমনি সমাজে সৃষ্টি হয় বিরাট একটি সমস্যা। নিচে বাল্য বিবাহের কারণে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো-
নারীদের উপর প্রভাব :
বাল্য বিবাহ নারী সমাজের অভিশাপ স্বরুপ এবং নারীদের স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপও বটে। অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দানের সময় মেয়েদের মৃত্যুঝুকি বেশী থাকে। এছাড়াও বাল্য বিবাহের কারণে নারী শিক্ষার অভাবে যথাযথ কর্মদক্ষতা অর্জন করতে না পারার কারণে নারীরা শ্রম বাজারে প্রবেশ করতে পারে না। তাই তাদেরকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। তাদের কোন স্বাধীনতা থাকে না। এতে তাদের উপর নেমে আসে নানা ধরনের অত্যাচার ও নির্যাতন।
পরিবারের ওপর প্রভাব :
বাল্য বিবাহ পারিবারিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। কারণ বাল্য বিবাহ পরিবার কেন্দ্রিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাল্য বিবাহের কারণেই মেয়েরা তাদের স্বাধীনতা হারায়। তাদের কোন ক্ষমতা থাকে না। আর এ কারণেই তাদের ওপর নেমে আসে নানা ধরনের নির্যাতন যেমন- দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, আত্মহত্যা, হত্যাকান্ড, এসিড নিক্ষেপ সহ নানা ধরনের পারিবারিক সমস্যা। যার জন্য একমাত্র দায়ী বাল্য বিবাহ।
সমাজের ওপর প্রভাব :
বাল্য বিবাহ সমাজের একটি ক্ষতিকর দিক। বাল্য বিবাহ একদিকে যেমন নারীকে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তেমনি আমাদের সমাজকে বিরুপ ভাবে প্রভাবিত করছে। পুরুষ শাসিত এ সমাজে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে তাদের স্বাধীনতা নষ্ট বা হরণ করা হচ্ছে। যা নারী, পরিবার, সমাজ তথা সমগ্র দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের উপায় :
সামাজিক কুপ্রথা হিসেবে বিবেচিত হয়ে বাল্য বিবাহকে উৎখাতের জন্য অনেক উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন রয়েছে। কিন্তু এ আইন এখনো জোরালো করা সম্ভব হয়নি। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করতে হলে এ আইন জোরালো করতে হবে। এছাড়াও নারী শিক্ষা ও নারীর স্বাবলম্বন অর্জনই পারে বাল্য বিবাহের অভিশাপ থেকে নারীকে মুক্তি দিতে। এর পাশাপাশি শিশুদের ক্ষমতায়ন করা গেলে তারা জোটগতভাবে তাদের সুরক্ষা করতে বাল্য বিয়ে রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিবে। কোন শিশু যদি ইভটিজিং বা যৌন হয়রানীর শিকার হয় তাহলে শিশুরা এর বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে। তাই শিশু সুরক্ষা করতে শিশুদের ক্ষমতায়নে শিশু ফোরামের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। যে সব শিশু নেতৃত্ব বিকশিত করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের সহযোগি হতে হবে আমাদের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫ সালের মাল্টিপল কাস্টার সার্ভে উদ্ধৃত এক জরিপে বলা হয়েছে ২০০৬ সালে দেশে বাল্য বিবাহের সংখ্যা ছিল ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা কমে হয়েছে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ।
“বিআইডিএসের ২০১৭ সালের জরিপে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে বাল্য বিবাহের সংখ্যা ৪৭ শতাংশ (১৮ বছরের নিচে), অন্যদিকে ১৫ বছরের নিচে বিয়ের সংখ্যা ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।” বাল্যবিবাহের কারণে আমাদের দেশকে শিশুমৃত্যুসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমাদের দেশকে শিশুমৃত্যু নানাবিধ সমস্যা থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অনেক কিশোর কিশোরী রুখে দাঁড়িয়েছে। বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়ার মাধ্যমে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে বাংলাদেশের একদল কিশোরী। নিজের বাল্যবিবাহ রুখে গত ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন ঝালকাঠির মেয়ে শারমিন আক্তার। তবে একদিন সারা দেশেই বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে এ ধরনের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়বে সে আশাও ব্যক্ত করেন এই কিশোরী। এছাড়াও জুডো প্রশিক্ষণ, বাল্যবিবাহ, নারী সহিষ্ণুতা ও ৯৯৯ এর ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে স্বপ্নতরী ফাউন্ডেশন। তাদের উদ্দেশ্যে বাল্যবিবাহ, নারী সহিষ্ণুতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়া ও জনগণের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধি করে সচেতন নাগরিক তৈরী করা। তাদের উদ্দেশ্যেকে সফল করার জন্য তাদের সাথে সমাজের কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ সকল শ্রেণী পেশার সচেতন ইতিবাচক ব্যক্তিদের সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের সাথে কাজ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন উক্ত ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।
স্বপ্নতরী ফাউন্ডেশন সদস্য মায়মুনা ফারিয়া জাহান সুমাইয়া বলেন, “আমরা চাই না কোনো মেয়ে বাল্য বিয়ের শিকার হোক। তাই এ ধরনের কোনো খবর পেলে আমরা শুরুতে অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করি। অনেক সময় তারা আমাদের ভুল বোঝেন। কিন্তু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাই। শেষমেশ কাজ না হলে প্রশাসনের সহায়তা নিই।”
একদিন সারা দেশেই বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে এ ধরনের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়বে সে আশাও ব্যক্ত করেন এই কিশোরী।
সংগঠনটির অপর সদস্যরা বলেন, “শুরুতে আমরা কয়েকজনে স্বপ্নতরী ফাউন্ডেশন কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু এখন আমাদের সঙ্গে অনেকে যোগ দিচ্ছে।”


যে সব শিশু নেতৃত্ব বিকশিত করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের সহযোগি হতে হবে আমাদের। শিশু বিবাহ রোধে শিশুদের ক্ষময়াতিত না করা গেলে শিশু বিবাহ শুধু আইন করে শতভাগ রোধ করা যাবে না।


লেখক- রুবেল মিয়া, সদস্য, স্বপ্নতরী ফাউন্ডেশন।

Comments

comments

আরও পড়ুন

নব নির্বাচিত এমপিকে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের ফুলেল শুভেচ্ছা
নব নির্বাচিত এমপিকে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের ফুলেল শুভেচ্ছা
নব নির্বাচিত এমপিকে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানের ফুলেল শুভেচ্ছা
প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন \ ঘাতক সিরাজুল গ্রেপ্তার
প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন \ ঘাতক সিরাজুল গ্রেপ্তার
প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন \ ঘাতক সিরাজুল গ্রেপ্তার
মঠবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ে রোধে তারুণ্যের কন্ঠ অনুষ্ঠিত
মঠবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ে রোধে তারুণ্যের কন্ঠ অনুষ্ঠিত
মঠবাড়িয়ায় বাল্য বিয়ে রোধে তারুণ্যের কন্ঠ অনুষ্ঠিত
অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালকারীদের কোন ছাড় নয়
অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালকারীদের কোন ছাড় নয়
অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালকারীদের কোন ছাড় নয়
বখাটে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বড়মাছুয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানববন্ধন
বখাটে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বড়মাছুয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানববন্ধন
বখাটে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বড়মাছুয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানববন্ধন
মঠবাড়িয়া-বড়মাছুয়া সড়কে কার্পেটিং কাজে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার : পিচ-পাথর নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ
মঠবাড়িয়া-বড়মাছুয়া সড়কে কার্পেটিং কাজে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার : পিচ-পাথর নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ
মঠবাড়িয়া-বড়মাছুয়া সড়কে কার্পেটিং কাজে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার : পিচ-পাথর নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ