রুট পারমিট ছাড়া বেপরোয়া গতির বাসে কলেজ ছাত্রের জীবন কেড়ে নিল \ সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় চট্টগ্রাম থেকে পাথরঘাটাগামী রোহান পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস অকালে কেড়ে নিল মিলন হাওলাদার (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রের জীবন। বুধবার (১৮ মে) সকাল পোনে দশটার দিকে মঠবাড়িয়া-পিরোজপুর সড়কের স্থানীয় গুদিঘাটা পিজিএস স্কুলের সম্মূখ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। কলেজ ছাত্রের নিহতের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে এবং সহপাঠীরা রাস্তা জুড়ে অবরোধ সৃষ্টি করে পরে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘাতক বাসটিকে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত কলেজ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ বাসটিকে ড্রাইভার ও হেলপারসহ আটক করলেও চালক ও বাসের হেলপার পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ বাসটি জব্দ করলেও পুলিশের উপস্থিতিতে থানার নিকটবর্তী টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ সম্মুখ সড়কে রাখা বাসটিতে বিক্ষুব্দ জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।
নিহত কলেজ ছাত্র মঠবাড়িয়া উপজেলার ২নং ওয়ার্ড উত্তর মিঠাখালী গ্রামের আলম বাজারের চা বিক্রেতা রুহুল আমীন হাওলাদার এর ছেলে ও স্থানীয় তুষখালী মহিউদ্দিন মহারাজ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
থানা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানাগেছে, বুধবার সকাল পৌনে দশটার দিকে কলেজ ছাত্র মিলন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে পুনরায় তুষখালী বাজারের উদ্দেশ্যে মহাসড়ক ধরে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এসময় মঠবাড়িয়া-পিরোজপুরের মহাসড়কের গুদিঘাটা নামক স্থানে চট্রগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার যাত্রীবাহী রোহান পরিবহনের বাসটি (খুলনা-মেট্রো-ব-১১-০১৬৭ ) বেপরোয়া গতিতে ওই কলেজ ছাত্রকে পিছন দিক থেকে চাপা দেয়। এতে ওই ছাত্র রাস্তার বাইরে ছিটকে পড়ে এবং তার মাথার মগজ বের হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসি ধাওয়া করে ঘাতক বাসটি আটক করতে পারলেও চালক ও হেল্পার পালিয়ে যায়। ঘটনার প্রতিবাদে তুষখালী মহিউদ্দিন মহারাজ কলেজ ও সাফা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ঘাতক বাসের চালককে দ্রæত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। খবর পেয়ে ওই কলেজের দাতা সদস্য ও পিরোজপুরের জেলা পরিষদের প্রশাসক মহিউদ্দিন মহারাজ, উপজেলা নির্ব্হাী অফিসার উর্মি ভৌািমক, সহকারী কমিশনার (ভুমি) সাখাওয়াত জামিল সৈকত, মঠবাড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও থানার অফিসার ইনচার্জ মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আস্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়। এসময় জেলা পরিষদের প্রশাসক মহিউদ্দিন মহারাজ তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ১ লাখ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মি ভৌমিক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
তুষখালী মহিউদ্দিন মহারাজ কলেজের অধ্যক্ষ মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, মিলন তার কলেজের একজন বিনয়ী ছাত্র ছিলেন। তিনি আরও জানান, ওই বাসটি রুটপারমিট না থাকলেও ওই সড়ক দিয়ে অবৈধ ভাবে বেপরোয়া গতিতে চলছিল। এর কারনে তার কলেজের শিক্ষার্থী মিলনকে চাপা দেয়। এদিকে হতদরিদ্র পরিবারের চার কন্যার পর একমাত্র পুত্র সন্তান মিলনকে হারিয়ে পিতা রুহুল আমিন ও মা মিনারা বেগম বাকরুদ্ধ।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থল হতে নিহত ওই কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও বলেন, বাসের রুট পারমিটের বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Comments
আরও পড়ুন





