করোনা ঠ্যাকানোর ন্যায় ঠকাঠকিও ঠ্যাকাই

জহির মামুন: করোনা ভাইরাস আতঙ্কে পুরো পৃথিবী আজ বিপর্যস্ত। এর ছোয়া লেগেছে আমাদের দেশেও। পরিচিত হচ্ছি নতুন নতুন শব্দ কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন ও শাটডাউন, লকডাউন এর সাথে, অনেকটা আমরা মেনেও নিয়েছি। বন্ধ করে দিয়েছি সব ধরনের সামাজিক মেলামেশা। দেশের কোথাও ধরে ধরে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সম্প্রতি দেশে আসা প্রবাসীদের। তারা কেও বাড়ির বাইরে বের হলে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে নিজ ঘরে। এর সবই হচ্ছে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে এবং বৃহত্তর ভাবে দেশ তথা পুরো বিশ^কে করোনার বিস্তার থেকে রক্ষা করার জন্য। দেশের মানুষের চরিত্র বিবেচনা করলে করোনার ক্ষেত্রে আমরা বিস্ময় জাগানো সাড়া পেয়েছি। করোনার বিস্তার রোধে বেশী সংখ্যক পদক্ষেপ আমরা মেনে নিয়েছি। তাই ঘরের মধ্যে নিজেকে বন্দি রেখেও মনে মনে অনেক উৎফুল্ল অনুভব করছি। কারণ দেশের মানুষ পজেটিভলি সাড়া দিয়েছে।
এখন আরো একটা আকাঙ্খা এসেছে মনে এ দেশকে নিয়ে, দেশের মানুষকে ঘিরে। করোনার মতই ভয়াবহ আরও একটা চক্রে আমরা বন্দি। কিছুটা খোলাসা করে বলতে একজন ডাক্তারকে দিয়েই উদাহরণটা শুরু করি। কারণ এই পেশায় আমার অনেক আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু রয়েছে। এই বিবেচনায় তারা আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে বলে আশা রাখি। প্রতিদিন নানা পেশার মানুষ আমরা অনেকটা আতঙ্ক নিয়েই ডাক্তারের কাছে যাই নানা ব্যধির কারণে। ডাক্তারদের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। কিন্তু আমাদের আতঙ্ক তাদের আন্তরিকতা ও ব্যবসার মানুষিকতা নিয়ে। আর সেটা হল তারা কি আমাদের পর্যাপ্ত সময় দেবেন, তারা কি আমাদের অহেতুক টেষ্ট দেবেন কমিশন লাভের জন্য? নাকি দেবেন পৃষ্ঠা ভর্তি ওষুধের প্রেসক্রিপশন। আবার এই ডাক্তারই তার নানা প্রয়োজনে আতঙ্ক নিয়ে ঘুরে বেড়ান। যেমন ধরুন তিনি যখন বাজারে বড় মাছটা কিনতে যান, আতঙ্ক নিয়ে ভাবেন মাছটা কি তাজা না ফরমালিন যুক্ত? বিক্রেতার কথা বিশ^াস করে কি লাভবান হব, নাকি বাসায় পচাঁ মাছ নিয়ে গিয়ে বউয়ের ঝাড়ি খাব? ফল, সব্জি কিনে স্বাস্থ্য ঠিক করব না কেমিক্যাল খাব। দুধওয়ালা খাঁটি দুধ দিবেন না ড্রেনের পানিযুক্ত দুধ খাওয়াবেন?
আমরা মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় দেখি বাজারে বিভিন্ন ভেজাল পণ্যে সয়লাভ। উৎপাদকরা কি ভেবে দেখেছেন- তার আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারের কোনো সদস্যও না বুজে ব্যবহার করতে পারেন, খেতে পারেন এইসব ভেজাল জিনিস। আমরা এই সবের সবকিছু করি, অর্থাৎ অন্যকে ঠকাই একটু বেশী লাভবান হয়ে নিজের পরিবার ও সন্তানের জন্য অর্থ জমিয়ে নির্ভর একটা ভবিষ্যৎ তৈরী করার জন্য। একটা বড় বাড়ি ও ভাল গাড়ি কেনা তথা সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করতে বেশি বেশি অর্থ যোগাই। কিন্তু এইসব আসলেই কি নিরাপত্তা দিতে সক্ষম? মোটেই না। কারণ আপনার আমার সন্তানের নিরাপত্তা ও ভালোমন্দের সাথে কিছু সার্ভিস জরুরী। যেমন ধরুন বাড়ির বুয়া, ড্রাইভার, দারোয়ান কিংবা সেই ডাক্তার। আমি যদি অসৎ হই তাহলে আমি কিভাবে আশা করব যে এরা সততার সাথে আমার সন্তানকে নিরাপদ রাখত? তাই আমি যে কারণে মানুষের আতঙ্ক সেই একই কারণে আমিও আতঙ্কিত।
করোনা যেমন একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় তেমনি করে ঠকাঠকিও আমাদের মাঝে চক্রাকারে ছড়িয়ে আছে। যা সবার দৈনন্দিন আতঙ্কিত জীবনের কারণ। তাই আসুন এই ঠকাঠকির আতঙ্ককেও বিদায় জানাই, যেমন করে করোনা ভাইরাসকে ঠেকাতে আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ।
Jahir Mamun, Merchant Mariner, Maersk Tankers Singapore Pte Ltd.
Comments
আরও পড়ুন





